ইতিহাসের কাঠগড়ায় শেখ মুজিব – পর্ব ৩/৪

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত মুজিবের হাতেই ১৯৭২ সালে। পরামর্শকদের বুদ্ধিতে তিনি ১০ এপ্রিল ১৯৭২ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দাবী করেন, ‌আটক হবার পূর্বে তিনি ওয়্যারলেসে স্বাধীনতা ঘোষণা চট্টগ্রামে জানিয়েছিলেন (সাপ্তাহিক, বর্ষ ৩ সংখ্যা ৪৭, ১লা বৈশাখ, ১৪১৭/ ০৭ এপ্রিল, ২০১১)।

আওয়ামীলীগ থেকে দাবী করা হয়, মুজিব চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এ দাবী খন্ডন করেছেন যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের বিশেষ সহকারী মঈদুল হাসান,“১৯৭১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের নেতারা স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে ভারত সরকারকে খুব বেশি পীড়াপীড়ি শুরু করেন। তখন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে ভারত সরকার গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করে। তারা বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার কোনো প্রমাণ, কোনো দলিল, কোনো জীবিত সাক্ষ্য আপনাদের আছে কি? ভারত সরকার বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্য প্রধান নেতাদের জিজ্ঞাসা করেছে যে, কাউকে কিছু বলে গেছেন কিনা শেখ মুজিবুর রহমান। এর মধ্যে জহুর আহমদ চৌধুরীও ছিলেন। প্রত্যেকেই বলেছেন, কাউকেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলে যাননি। জহুর আহমদ চৌধুরী নিজে তাজউদ্দিনকে বলেছেন তাকে কিছু বলা হয়নি। 

স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে ১৯৭২ সাল থেকে যে দাবিগুলো করা হয়, সেটা হচ্ছে ইপিআর সিগন্যালসের মাধ্যমে তিনি খবর পাঠিয়েছিলেন চট্টগ্রামে। অর্থাৎ, যেভাবেই হোক, জহুর আহমদ চৌধুরীকে সেটা পাঠিয়েছিলেন। অথচ রাত সাড়ে ১২টায় টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে শেখ মুজিব যদি একটা ফোন করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ভিড় করা যে কোনো বিদেশি সাংবাদিককে স্বাধীনতার ঘোষণার কথা জানাতেন, তাহলে সারা পৃথিবীতে সঙ্গে সঙ্গে তা রাষ্ট্র হয়ে যেত।….পরে ঘটনার প্রায় এক বছর পর বলা হয়, ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার ঠিক আগে শেখ সাহেব নিজে ইপিআরের সিগন্যালসের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় খবর পাঠান। আমি যতটুক জানি, সামরিক বাহিনীর সিগন্যালস সব সময় অত্যন্ত বিশ্বাসী লোকদের দ্বারা গঠন করা হয়। সিগন্যালসই কোনো বাহিনীর আত্মরক্ষার ও আক্রমণের মূল যোগাযোগ মাধ্যম। আর ইপিআর ছিল মিশ্র বাহিনী। এই বাহিনীতে অনেক অবাঙালিও ছিল। সেখানে তাদের বাদ দিয়ে সন্দেহের পাত্র বাঙালিদের হাতে সিগন্যালস থাকতে পারে না। কাজেই ইপিআর সিগন্যালসের মাধ্যমে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন – এটা বোধহয় অবাস্তব কথা।”
pak_bharot10
বাস্তব হলো, ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরুর ২ দিন আগে ২৩ মার্চ বেলুচ রেজিমেন্ট পিলখানার দায়িত্ব নিয়ে নেয় এবং ২৫ মার্চ দুপুরে ইপিআরের বাঙ্গালী সদস্যদের নিরস্ত্র করা হয়, এ ঘটনা সম্পর্কে ২৫ মার্চ রাতে আটকের আগে শেখ মুজিবকে জানিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক নেতা আঃ রাজ্জাকও।  কাজেই ইপিআর ওয়ারলেস যোগে বার্তা পাঠানো সম্পূর্ন অসম্ভব। আর কথিত ইপিআর শওকত আলীর ওয়াকিটকি থেকে চট্টগ্রামে কেনো মেসেজ পাঠানো পুরোপুরি অবাস্তব ঘটনা। কেননা ঢাকা থেকে চিটাগাংয়ের ২১২ কি.মি. দুরত্ব ওয়াকিটকির নেটওয়ার্কের বাহিরে। প্রযুক্তির এ চরম বিকাশের যুগে ঐরূপ কোনো ওয়াকিটকি অদ্যাবধি আবিস্কার হয়নি। তাছাড়া ইপিআরের ওয়ারলেস মারফত কোনো সংবাদ চট্টগ্রাম পাঠালে সেটি প্রথমেই জানার কথা চট্টগ্রাম ইপিআরের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন রফিকের। কেননা, তিনি ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের লোক। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর রফিক এরকম কোনো বার্তার কথা কখনই স্বীকার করেন নি। বরং তার দাবী, ঐদিন তারা অনেক চেষ্টা করেও ঢাকার সাথে কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন নি।

স্বাধীনতার ঘোষনা নিয়ে শেখ মুজিবের দাবীর সমর্থনে এগিয়ে আসেন আওয়ামী গবেষক ডঃ মযহারুল ইসলাম। ‘বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিব’ গ্রন্থে ১৯৯৩ সালে ডঃ মযহার দাবী করেন, “২৫ তারিখ রাত ১০ টার দিকে শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে তাজউদ্দিন ও ওসমানীর সাথে তিনিও ইংরেজীতে Declaration of Independence মুসাবিদা করেন।” অথচ এ বইয়ের ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত প্রথম সংস্করণে ওই ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই। তাছাড়া ২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দিন ৩২ নম্বর থেকে বেরিয়ে যান রাত ৯টার আগেই। সেক্ষেত্রে রাত দশটায় তাজউদ্দিনের উপস্থিতিতে খসড়া তৈরীর দাবী- বানোয়াট বলেই প্রতীয়মান হয়। তাজউদ্দিন নিজে মঈদুল হাসানকে বলেছেন যে, স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে মুজিব রাজী হননি, বরং ‍মুজিব তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। একইরূপ কথা জোহরা তাজউদ্দিনও সাক্ষাৎকারে বলেছেন। এর মাধ্যমেই ডঃ মাযহারের খসড়া গল্পটির অসাড়তা প্রমানিত হয়।

১৯৭২ সালে ১০ এপ্রিল গণ পরিষদের ঐ অধিবেশনেই আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান স্বীকারের প্রস্তাবে সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী সংশোধনী দাবী করেছিলেন, “ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উল্লেখ করা হয় নাই। আমার আবেদন তাদের কথা উল্লেখ করা উচিত এবং করা হোক”। কিন্তু সামরিক বাহিনীর নাম রয়েছে অযুহাত দেখিয়ে সংসদ নেতা মুজিব সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই হলো মুজিবের উদারতা! যে মুজিব জানেও না, বাংলাদেশ স্বাধীন করতে গিয়ে তার অবর্তমানে কি ঘটে গেছে! তার পক্ষে চট্টগ্রামের ইবিআর বা ইপিআরের অবদান স্বীকার করার সুযোগ কোথায়?

গণপরিষদের অধিবেশনে যেদিন শেখ মুজিব ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’র দাবী করেন, তার ঠিক দু’দিন আগে ১৯৭২ সালের ৮ই এপ্রিল আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশন বসে। ঐ অধিবেশনে সাধারন সম্পাদকের রিপোর্টে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে তাজউদ্দিন বলেন, “আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে চট্টগ্রামে সংগ্রামেরত মেজর জিয়াউর রহমান বেতার মারফত বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা প্রচার করেন এবং বাংলাদেশে গণহত্যা রোধ করতে সারা পৃথিবীর সাহায্য কামনা করেন” (সূত্রঃ দৈনিক বাংলা, ৯ এপ্রিল ১৯৭২)। এর ঠিক এক বছর আগে ১১ ই এপ্রিল ১৯৭১ প্রবাসী সরকার গঠনের প্রাক্কালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কিভাবে চলছে সে সম্পর্কে তাজউদ্দিন আহমদ জাতিকে অবহিত করেন স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত এক ভাষণে, “The brilliant success of our fighting forces and the daily additions to their strength in manpower and captured weapons has enabled the Government of the People’s Republic of Bangla Desh, first announced through major Zia Rahman, to set up a full-fledged operational base from which it is administering the liberated areas.” (Ref: Bangladesh Document vol-I, Indian Government, page 284). তাজউদ্দিনের কোনো বক্তব্যেই শেখ মুজিব কখন কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এরূপ কেনো বর্ণনা নাই। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সেখান থেকে সরকার ও পুর্নাঙ্গ একটি ”অপারেশনাল বেস” পরিচালিত হবার কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে স্বীকার করেছেন।

pak_bharot12
ভারত সরকারের প্রকাশিত Bangladesh Documents Page 530 আবার সি আই এর কথার পুনররাবৃত্তি করা আছে। আবার টিক্কা খানের পিআরও মেজর সিদ্দিক সালিকের লেখা Witness to Surrender এর ১০ অনুচ্ছেদঃ
Major Ziaur Rahman, the second-in-command of 8 East Bengal, assumed command of the rebels in Chittagong in the absence of Brigadier Majumder ( Who was tactfully taken to Dacca a few days earlier). While the government troops clung to the radio station……….Major Zia broadcast ‘the declaration of bangladesh’

একদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ যখন চলমান, অন্যদিকে তখনও পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনের প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামীলীগের মধ্যে কাজ চলতে থাকে। এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিবিদ অলি আহাদ ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫’ পুস্তকে লিখেছেন, “যাহা হউক, শেষ পর্যন্ত বাংলা জাতীয় লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম এম আনোয়ারের উদ্যোগে আগরতলা এসেম্বলি মেম্বার রেষ্ট হাউসে আমার ও আওয়ামী লীগ নেতা এবং জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল মালেক উকিলের মধ্যে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর এক দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানাইয়া দেন যে, শেখ মুজিবর রহমান গ্রেফতারের পূর্বমুহূর্ত অবধি কোন নির্দেশ দান করেন নাই। এইদিকে মুজিব-ইয়াহিয়ার মার্চ আলোচনার সূত্র ধরিয়া কনফেডারেশন প্রস্তাবের ভিত্তিতে সমঝোতার আলোচনা চলিতেছে। জনাব মালেক উকিল আমাকে ইহাও জানান যে, তিনি এই আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে আশাবাদী। প্রসংগত ইহাও উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে আমি সর্বজনাব আবদুল মালেক উকিল, জহুর আহমদ চৌধুরী, আবদুল হান্নান চৌধুরী, আলী আজম, খালেদ মোহাম্মদ আলী, লুৎফুল হাই সাচ্চু প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতার সহিত বিভিন্ন সময়ে আলোচনাকালে নেতা শেখ মুজিবর রহমান ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বা লক্ষ্য সম্পর্কে কোন নির্দেশ দিয়াছিলেন কিনা, জানিতে চাহিয়াছিলাম। তাহারা সবাই স্পষ্ট ভাষায় ও নিঃসঙ্কোচে জবাব দিলেন যে, ২৫শে মার্চ পাক বাহিনীর আকস্মিক অতর্কিত হামলার ফলে কোন নির্দেশ দান কিংবা পরামর্শ দান নেতার পক্ষে সম্ভব হয় নাই। অথচ স্বাধীনতা উত্তরকালে বানোয়াটভাবে বলা হয় যে, তিনি পূর্বাহ্নেই নির্দেশ প্রদান করিয়াছিলেন” (পৃষ্ঠা ৪২৪- ২৫)। এ থেকে পরিস্কার বোঝা যায়, যুদ্ধ চলাকালে আওয়ামীলীগের সাথে পাক সরকারের যে একটা যোগাযোগ ছিলো। তাছাড়া এরূপ যোগসূত্র স্থাপনে বিদেশী কূটণীতিকও ছিলেন তৎপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী ক্রিস পারভেন মার্কিন সিনেট সাব কমিটির শুনানীতে জানিয়েছিলেন, ইয়াহিয়ার নিকট থেকে কারারুদ্ধ নেতা শেখ মুজিবের পরিবারের ভরন পোষণের জন্য তার স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে ১৫০০ পাকিস্তানী রূপী মাসিক ভাতার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, যখন প্রতি ভরি সোনার দাম ছিলো ১৪০ রূপী (সূত্রঃ অলি আহাদ, জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫)।

10276564_10154139949585556_1810958465_n
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পশ্চিম বাংলার (ভারত) আনন্দ পাবলিসার্স প্রকটি পুস্তক প্রকাশ করে যার নাম ‘বাংলা নামে দেশ’। এ গ্রন্থ সম্পর্কে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ ১৯৭২ তারিখে নিজ স্বাক্ষরিত এক বাণীতে বলেন, “বাংলা নামের দেশ গ্রন্থে সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, সংগ্রামের আগের ও পরের ইতিহাস, ধারাবাহিক রচনা, আলোকচিত্রমালায় চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। বইটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ন দলিল।” অর্থাৎ শেখ মুজিব নিজেই সার্টিফিকেট দিয়ে গেছেন- এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রশ্নাতীত। এ পুস্তকের মুজিব আরো লিখেন, “১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ্চ আমি ঘোষণা করেছিলাম ‘এই সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বহু নির্যাতন, বহু দুঃখভোগের পর আমাদের সংগ্রাম স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে। সেই সংগ্রামের কাহিনী ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। পাকিস্তানী সমরনায়কদের নরমৃগয়ার শিকার হয়েছে ৩০ লক্ষ লোক, এক কোটি লোক আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। জঙ্গীচক্র আঘাতের পর আঘাত হেনেছে, কিন্তু আমার সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনোবল তাতে ভেঙ্গে পড়েনি, আমরা স্বাধীনতা, আদায় করে নিয়েছি।” এখানেও দেখা যাচ্ছে, সংসদে দাবী করার দু’সপ্তাহ আগেও শেখ মুজিব নিজেই ২৬ মার্চের তথাকথিত স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে নীরব রইলেন। তার মানে হতে পারে দুটোঃ হয় স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি শেখ মুজিবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না, কিংবা তিনি ঘোষণা দেন নি বিধায় এখানে উল্লেখ করেন নি।

বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর সম্পাদনায় বাংলাদেশ সরকারের ডিএফপি’র প্রকাশিত Bangladesh নামক বইয়ে লেখা হয়, “On March 26, A declaration was broadcast from Chittagong Radio expressing confidence in the leadership of Sheikh Mojibur Rahman and taking up of arms by the Bengali army and people at the instruction of Sheikh Mojib” এতে তিনি কোথাও শেখ মুজিব কতৃক স্বাধীনতা ঘোষণার কথা উল্লেখ করেননি। এরূপ কোন ঘোষণা বা বার্তা সত্যিকারেই থাকলে তৎকালীন সরকার তা ছাপতে ভুল করতো না। বিশেষ করে আ গা চৌধুরীর মত লোক এরকম ভুল করতে পারে না।
pak_bharot8
মেজর জিয়ার চট্টগ্রামের ঘোষণার খবর লেখা হয়েছে শেখ মুজিব স্বীকৃত স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ন দলিল “বাংলা নামের দেশ” পুস্তকের ৮১ পৃষ্ঠায়, “মুজিব গ্রেফতার। সর্বত্র সঙ্ঘশক্তি প্রায় তছনচ। এই শূন্য অবস্থাকে ভরাট করে তোলার জন্যে মেজর জিয়া রবিবার ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম রেডিও থেকে অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করলেন। তার প্রধান তিনি নিজেই। মনোবল বজায় রাখতে সব জেনেও বললেন, মুজিবের নির্দেশেই এই সরকার, তিনি যেমন বলছেন তেমন কাজ হচ্ছে” (বাংলা নামের দেশ। এপ্রিল ১৯৭২। আনন্দ পাবলিশার্স, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত)। উল্লেখ্য, এ বইতে শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধী উভয়েই বাণী দিয়েছিলেন। এর বাইরে জেনারেল কেএম সফিউল্লাহ, আবুল মাল মুহিত, যুক্তরাষ্ট্রের ষ্টে ডিপার্টমেন্ট টেলিগ্রাম, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়, মূলধারা, বাংলাদেশ ডকুমেন্টেস, এপি, পিটিআই সহ নানা বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।  জিয়ার এ স্বাধীনতার ঘোষনায় নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান পরিচয় দিয়ে স্বাধীনতা Proclaim করেন। চট্টগ্রাম বন্দরের একটি জাপানী জাহাজ তা রেকর্ড করে।

লেখক: মোঃ শামসুল আলম
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক

    ইতিহাসের কাঠগড়ায় শেখ মুজিব -৪ (শেষ পর্ব)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *