৭ ই মার্চের ভাষণ

আওয়ামী লীগ আবদার করছে, শেখ মুজিবের ৭ ই মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে মেনে নেয়ার। কারন ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে তিনি বলেছেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।” কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পরে ডেভিড ফ্রষ্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিব এ দাবীকে নাকচ করে বলেছেন, ৭ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি। বাস্তবতা হলো, শেখ মুজিব নিজেও কখনো স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন বলে দাবী করেননি বরং অস্বীকার করেছেন।  ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারী প্রখ্যাত বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট (যিনি সম্প্রতি মৃত্যুবরন করেছেন) শেখ মুজিবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ’আপনি যদি বলতেন, ’আমি স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষনা দিচ্ছি তাতে কি ঘটতো,। শেখ মুজিবের জবাব ছিলো, ’বিশেষ করে এই দিনটিতে আমি তা করতে চাইনি যে তারা (পাকিস্তান) বলুক ’শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করেছে এবং আঘাত হানা ছাড়া কোন বিকল্প নেই’। (সূত্র, বাঙালী হত্যাকান্ড ও পাকিস্তানের ভাঙ্গন, মাসুদুল হক)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবকে প্রতিষ্ঠার হাস্যকর এই অপচেষ্টার আগে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব ষ্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

১.            শেখ মুজিব ৭ ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দিলে স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ  স্বাধীনতা দিবস পালন করা হচ্ছে কেন?

২.            ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হলে পরদিন ৮ই মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানতো বটেই এমনকি পূর্ববঙ্গের কোন পত্রপত্রিকায়ও সেই সংবাদ প্রকাশিত হয়নি কেন?

৩.            ৭ মার্চের ভাষন যদি স্বাধীনতার ঘোষণা হয় তাহলে কিসের আশায় শেখ মুজিব পাকিস্তানীদের সঙ্গে তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে রূপসী বাংলা)  ২৫ মার্চ পর্যন্ত দফায় দফায়  বৈঠক করছিলেন?

৪.            ৭ মার্চে ঢাকায় সেনা সংখ্যা ছিলো মাত্র বারো হাজার কিন্তু ২৫ মার্চ এই আপসরফার আলোচনায় সময়কালে ঢাকায় পাকিস্তানী সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় লক্ষাধিক। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপন করে এই সুযোগে কেন শেখ মুজিব পাকিস্তÍানী জেনারেলদেরকে ঢাকায় লাখো সৈন্য সমাবেশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন?

৫.            পাকিস্তানীরা হামলা করলে কে কোথায় প্রতিরোধ গড়ে তুলবে সেই পরিকল্পনা কেন ছিলোনা? পাকিস্তানীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতিদিন অপেক্ষমান দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের শেখ মুজিব কেন বলছিলেন  “আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে।

৬.            ৭ মার্চের ভাষন স্বাধীনতার ঘোষণা হলে এরপর যুক্তিসঙ্গতকারনেই শেখ মুজিবের যুদ্ধ প্রস্তুতি নেয়ার কথা ছিলো, প্রয়োজন ছিলো রণকৌশল ঠিক করার, শেখ মুজিব কি সেটি করেছিলেন।

৭.            শেখ মুজিব ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে দীর্ঘ ৪৮ দিন পর অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলো কেন?

৮.            ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানীদের সঙ্গে শেখ মুজিবের আলোচনা চুড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরও তিনি আত্মগোপনে না গিয়ে কেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ীতে বসে থেকে পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলেন?

৯.            বাঙালীকে ঘোর বিপদে রেখে  তিনি কেন পাকিস্তান এবং পাকিস্তানীদের নিরাপদ মনে করলেন?  স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নিজের ঘরে বসে থেকে আত্মসমর্পন করার আর একটি নজীরও কি পৃথিবীর কোন দেশের ইতিহাসে আছে?

১০.        স্বেচ্ছাসমর্পনের আগে শেখ মুজিব নিজের পরিবারের সদস্যদের কেন নিরাপদে পাক সেনাদের  হেফাজতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন? কোন ভরসায়? কাদের ভরসায়?

১১.        শেখ মুজিব তার দলের প্রথম সারির নেতাদেরকে কেন যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বলেন নি? কেন তাদেরকে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন?

১২.        পাকিস্তানীরা ঢাকায় ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ করছে জেনেও প্রশিক্ষিত বাঙালি সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেননি কেন? শেখ মুজিবের অদূরদর্শিতার কারণেই কি পাকিস্তানীরা যুদ্ধ শুরুর প্রথমরাতের প্রথমেই রাজারবাগে পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা করেনি?

১৩.        ৭১ সালের ২৫ শে মার্চের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে রাত সাড়ে ৮টায় শেখ মুজিবের ৩২ নম্বরের বাড়িতে সাংবাদিকরা গেলে কেন তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি?

১৪.        এই ধরণের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বের যে কোন নেতাই সাধারনতঃ সাংবাদিকদের কাছাকাছি রাখেন। কিন্তু শেখ মুজিব কেন তার উল্টোটা করলেন?

১৫.        সেই সময় পূর্ব বাংলার উত্তাল পরিস্থিতিতে অনেক বিদেশী সাংবাদিকরাও ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। এমনকি তৎকালীন হোটেল কন্টিনেন্টালেও বিদেশী সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। শেখ মুজিব চাইলে ওই সময় দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের মাধ্যমেও স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সুযোগ গ্রহন করতে পারতেন। কিন্তু সেই সুযোগ গ্রহন করলেন না কেন? ঢাকায় কোন সাংবাদিককে ফোন করেও স্বাধীনতার ঘোষনার কথা তিনি জানিয়েছেন এমন কোন প্রমাণও নেই।

১৬.        মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে পাকিস্তানীরা গুলী করে পাখির মতো বাঙালিদের হত্যা করলেও তারা কেন শেখ মুজিবের পরিবারকে ঢাকায় রেখেছিলো আরাম আয়েশে?

১৭.        শেখ মুজিবের পরিবারকে পাক সরকার প্রতিমাসে কেন ১৮শ রুপি করে পৌছে দিতো?

১৮.        এ মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন পকিস্তানী বাহিনী নৃশংসতা চালিয়ে বাঙালিদের হত্যা করছিলো সেই সময় শেখ হাসিনা সন্তান সম্ভবা হলে পাকিস্তানীরা নিজেদের গাড়ীতে করে শেখ হাসিনাকে কেন হাসপাতালে নিরাপদে পৌছে দিয়েছিলেন? শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের জন্য পাকিস্তানীদের এই দরদের নেপথ্য কারণ কি?

১৯.        শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাইলে মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে হাজার হাজার মাইল উড়ে এসে পশ্চিম পাকিস্তানীরা এতসংখ্যক বাঙালিকে হত্যা করতে পারতো?

২০.        মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ৩০ লাখ বাঙালি হত্যা এবং ২ লাখ মা বোনের ইজ্জতহানির দায় কার? স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের সাথে মুজিবের বিশ্বাসঘাতকতাই কি এত প্রানহানির জন্য দায়ী নয়?

যুদ্ধে অংশ গ্রহন না করে ঘরে বসে থাকা অথবা কলকাতা ফেরত আওয়ামী বুদ্ধিজীবী কিংবা আদালত নয় বরং এইসব   প্রশ্নগুলোর জবাবের উপর ভিত্তি কোরেই দেশের জনগন রায় দেবে শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষন স্বাধীনতার ঘোষনা ছিলো নাকি এটি ছিলো পাকিস্তানীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে পাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েস।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *