প্রানহাণীর জন্য দায়ী কে?

শেখ মুজিবুর রহমান ৭১‘-এর ৭ই মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। ৭ই মার্চ পরিস্কারভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা না করে বরং পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশ্যে ৪টি দাবি করলেন। দাবী ৪টি হলো (১) সামরিক আইন মার্শাল ল তুলে নিতে হবে। (২) সমস্ত সেনাবাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে। (৩) যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে। (৪) আর জন প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করত হবে। অর্থাৎ শেখ মুজিবর রহমানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। তবে শেখ মুজিব এইসব দাবি মেনে নেওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারকে সুনির্দ্দিষ্ট কোন সময়সীমাও বেঁধে দিলেন না। কবি নির্মলেন্দু গুণের মতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের দাবি পাকিস্তান যদি পাকিস্তান মেনে নিত তাহলে আর হোক এইমাত্রায় বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বিশ্লেষণ এবং সামরিক পরিংসখ্যানে জানা যায়, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে ঘোষণা করতেন এবং সুদুর ১২ হাজার মাইল দূর থেকে আসা পাকিস্তানী সৈন্যদের বন্দী করতে বলতেন, তাহলে পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে বাঙালি সৈন্য, ইপিআর, পুলিশ ও জনতার যে লড়াই বা যুদ্ধ হতো, সেই যুদ্ধে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সামান্য রক্তপাতের বিনিময়েই আমাদের দেশ মুক্ত বা স্বাধীন হতে  পারতো। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানী সৈন্য সংখ্যা অনেক কম ছিল। পাকিস্তানী পাঞ্জাবী, সিন্ধি, বেলুচ সৈন্যদের অধিকাংশই ছিল অফিসার। যারা যুদ্ধ পরিচালনা করে কিন্তু নিজেরা সরাসরি যুদ্ধ করে না। এই নগণ সংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্যকে ধরাশায়ী বা পরাস্ত করতে বাঙালি সৈন্য, ই পি আর (বর্তমানে বিডিআর-বিজিবি) পুলিশ এবং সাড়ে সাত কোটি জনতার কোনক্রমেই সপ্তাহের বেশি সময় লাগতো না। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পাকিস্তানের যত নন বেঙ্গলি সৈন্য ছিল, ৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর (৭ই মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত) পাকিস্তান বাংলাদেশে তার সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ বহুগুন বাড়ায়। পাকিস্তানী নন-বেঙ্গলি সৈন্যের সংখ্যা যখন বাঙালি সৈন্য সংখ্যার চাইতে বহুগুন বেড়ে যায় তখনই পাকিস্তানীরা বাঙালিদের আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তান ৭ই মার্চ থেকে তৎকালীন ঢাকা তেজগাঁও বিমান বন্দর দিন-রাত ২৪ ঘন্টা শুধু সৈন্য আনার কাজে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার মাইল দূরবর্তী একটি দেশ। শুধু দুরত্বটাই মুখ্য নয়। আমাদের বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের ঠিক পুরোপুরি মাঝখানে রয়েছে পাকিস্তানের চির শক্রদেশ ভারত। এই মাঝখানের শক্র-ভাবাপন্ন বিশাল ভারত টপকে পাকিস্তানীদের বাংলাদেশে আসা কিছুতেই সম্ভব ছিল না। তাই ভৌগোলিক কারণেই অতি সহজে স্বল্পসময়ে স্বল্প প্রাণহানিতে আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়া খুবই সম্ভব ছিল। এমন হওয়া অসম্ভব  ছিল না যে, বিনা যুদ্ধে বিনা রক্তপাতেই বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারতো।  কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় ত্রিশ লক্ষ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করতে হলে দুটি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করতেই হবে। তার একটি হল স্বাধীকার আন্দোলন আর অপরটি স্বাধীনতার ঘোষনা। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসন শোষনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন আন্দোলন করেছেন এনিয়ে কেউ বির্তক করে না। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধে তার ভ’মিকা প্রশ্নবিদ্ধ। শহীদ জিয়া দুইবার মূলত স্বাধীনতা ঘোষনা দেন। তিনি স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে নিজের হাতে খসড়া (ড্রাফট) তৈরি করে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। প্রথম ঘোষনায় নিজেকে রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তী ঘোষনাটি দেন ষেখ মুজিবের পক্ষে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *